আরএসএস এবার দখল চায় জঙ্গল মহলের
ভোটের নামে জড়ো হওয়া মানুষ তাদের কে বোঝালেন "বিজেপিকে আনুন সব চাহিদা মেটাবো। কোনো চিন্তা নেই "! এক সময় এই বার্তাই শুনিয়েছিল মমতা। আজ সবই ফ্যাকাসে

খোলা চিঠি লিখলেন মধুসূদন মাহাতো/২৯.৪.২০১৯
‘আর যাই হোক জঙ্গমহলে তো আর এখন প্রতিদিন লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়না’!
আপাতঃদৃষ্টিতে মনে হয়— ‘তাও তো বটে’!
কিন্তু কারা ছিল সেদিনের সেই ‘মাও ফাও’? তারা এখন কোথায়? সেদিন রাতের আঁধারে ওদের কাঁধে রাইফেল আর গামছা বাঁধা মুখ দেখে চিনতে পারেনি শালকু সরেনের মা, রামপদ মাঝির স্ত্রী, হরেণ বাস্কের মেয়েরা৷ কারা ছিল ওরা? যারা জঙ্গলমহলে সোনালী সুখেরদিন আনবো বলে স্বশস্ত্র বিপ্লবের বার্তা শুনিয়ে দিনেরবেলা গাছ কাটতো, রাস্তা কাটতো, ঘর পোড়াতো আর রাতেরবেলা বাড়ি থেকে জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়ে বাম নেতা কর্মীদের বুকে গুলি চালাতো ! তারা কারা?
হ্যাঁ, প্রায় তিন শতাধিক বাম নেতাকর্মী তখন লাশ বনেছে৷ জ্ঞানেশ্বরী ট্রেন নাশকতায় নিরীহ লাশ ৷ শুধু কি তাই! বান্দোয়ান থানার ওসি, বারিকুল থানার আইসি, আইবি থেকে শিলদায় একসাথে ২২ জোয়ান তথাকথিত বিপ্লবের বলি হয়েছেন৷ শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইসিডিএস কর্মী কেউ থাকেনি ঐ লাশের তালিকায়? পুলিশই যখন ছিল তটস্থ, তখন কি উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল পুলিশী সন্ত্রাস বিরোধী জন সাধারণের কমিটি? এই জনসাধারণের কমিটির সাথে কেন বারে বারে দেখা গেছে মমতা ব্যানার্জী, পার্থ চ্যাটার্জীদের ? কেন জঙ্গলমহলে কাতারে কাতারে আসতে দেখা যেতো শহুরে বুদ্ধিজীবিদের? কিসের তাগিদে ভিনরাজ্য থেকে উড়ে আসতেন মেধা পাটেকর, অগ্নিবেশরা? কেন সবাই একবাক্যে বলতেন জঙ্গলমহল থেকে আধাসামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের কথা?
এখন তারা কোথায়?
ঘোলা জলে চুনোপুটিদের সাথে শোল, বোয়ালের ঘোরাফেরা জঙ্গলমহলের মানুষ সেদিন বুঝতে পারেনি! ঘোলা জল থিতু হতেই দেখা গেল শোল বোয়ালেরা সাম্রাজ্য দখল করে বসে আছে!
হ্যাঁ, ২০১১-র আগে অন্ধকারে মুখে গামছা বাঁধা লোকগুলোকে সেদিন জঙ্গলমহলের মানুষ চিনতে পারে নি৷ ২০১১-র পর সরকারি জামাই আদরই চিনিয়ে দিয়েছে আসলে ওরা কারা ছিল! সেদিনকার সেই খুনীরা মূলস্রোতে ফেরার নামে এককালীন লক্ষ লক্ষ টাকা সাহায্য পেয়ে গেলেন৷ সারাজীবন স্বচ্ছন্দে কাটানোর জন্য সরকারী চাকুরী পেয়ে গেলেন৷ এমনকি দাম্পত্যজীবন সুখী করতে সরকারী নিরাপত্তাও পেয়ে গেছেন৷
কিন্তু যারা খুন হয়ে গেলেন তাদের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের কি হলো? যে মায়ের কোল খালি হয়ে গেল, যে স্ত্রী স্বামী হারা হলো, যে ছেলেমেয়েরা আর কোন দিন বাবা বলে ডাকতে পাবে না, অকালে যাদের লেখাপড়া চলে গেল, যাদের একমাত্র রোজগেরে মানুষটা চলে যাওয়ায় সংসারে অন্ধকার নেমে এলো, তাদের কি হলো??
হ্যাঁ, ওরা কাঁদে আজও কাঁদে! আর মাঝে মাঝে চোয়াল শক্ত করে পথে নামে৷
মধুসূদন মাহাতো/২৯.৪.২০১৯
(উপরিউক্ত লেখাটি সংগ্রহীত / এই বিভাগের লেখকের স্বাধীন মতামত প্রকাশ / এই পোর্টালের দায়বদ্বতা নেই)