Education Opinion

বাচ্ছারা রয়েছে এখনও ভয়ে ! শাস্তির আড়ালে চলছে অমানবিক কাজ।

খবরের শিরোনামে প্রায়ই উঠে আসছে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, কিন্তু ক্ষমা চেয়েই পার পেয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

@ দেবশ্রী : পড়াশোনা না করলে, বকা বা শাস্তি দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই শাস্তি যদি অমানবিক হয়ে থাকে তাহলে তাকে আর যাই হোক শাস্তি বলে গণ্য করা হয় না। বাবা মায়েরা অনেক বিশ্বাসের সাথে, নিজেদের ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠায়, কারন তাদের মতে, বাড়ির পর, স্কুল একমাত্র সুরক্ষিত জায়গা তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য। কিন্তু সেই স্কুল যখন ছাত্র ছাত্রীদের কাছে আতঙ্কের রূপ নেয় তাহলে তার থেকে ভয়ঙ্কর রূপ আর কিছু হতে পারে না। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের বিশপুর পূর্বপল্লি প্রাথমিক স্কুলে ঘটে যায় এমনি একটা দুর্ঘটনা। দ্বিতীয় শ্রেণীর এক খুদে পড়ুয়া পড়া মুখস্ত না করে আসাতে চটে যান মাষ্টারমশাই। শাস্তি দেওয়ার জন্য, বাচ্ছা ছেলেটিকে, স্কুলের নোংরা মেঝে, জিভ দিয়ে চাটতে বলেন। এমনি অভিযোগ ওঠে, বিষপুর পূর্বপল্লি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সৌমিত্র রায় এর বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষক স্বীকারও ক্রেচেঞ্জে, এমন কাজ তিনি করেছেন। ঘটনা, অভিভাবকদের কানে পৌঁছালে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন, সেই বিক্ষোভের মুখে পড়ে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।

তবে, জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) অলোক মহাপাত্র বলেন, ‘‘এমন কিছু কানে আসেনি। তবে যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে তা অবশ্যই নিন্দনীয়।’’ তিনি আরও বলেন যে, সংশ্লিষ্ট সার্কেল ইন্সপেক্টরের কাছ থেকে খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এমনটাই আশ্বাস দেন তিনি।

ওই স্কুলে মোর ৭০ জন পড়ুয়া। রয়েছেন দুজন শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে সৌমিত্র রায় একটু বেশি রগচটা বলেই জানেন অভিভাবকেরা। প্রত্যেক ছেলে মেয়েরা ওনার নাম শুনেই ভয়ে কাঁপে। এমনও অভিযোগ উঠে এসেছে যে, ছেলেমেয়েরা পড়া না পারলে তাদের মারধর করতেন তিনি। অভিভাবকেরা জানান এর আগেও মেঝে ছাতার এমন ঘটনা ঘটেছে। ছেলেই মেয়েরা বাড়ি ফিরে অনেকসময় ভয়ে সেই কথা লুকিয়ে যেত। তবে শনিবার আর এই ঘটনা চেপে থাকেনি। বাড়িতে গিয়েই সব কথা বলে দেয় দ্বিতীয় শ্রেনীর সেই পড়ুয়া।

সোমবার অভিযুক্ত শিক্ষককে স্কুলে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। ঘন্টাখানেক ধরে এই বিক্ষোভ চলার পরে নিজের ভুলের কথা স্বীকার করেন সৌমিত্র। ভবিষ্যতে এমনটা তিনি আর করবেন না সেই কোথাও দেন। তারপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

এখন প্রায় বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষক-শিকিকদের উপর, ছাত্র ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ উঠছে, কিন্তু তেমন বড় কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

ওই পড়ুয়াদের এমন প্রকার অমানবিক শাস্তি কেন দেওয়া হয়েছিল, তা জিজ্ঞাসা করায় বাছা ছেলেটি জানায়, ‘‘পড়া পারিনি বলে মাস্টারমশাই বকাবকি করেন। সকলের সামনে ক্লাস ঘরের মেঝে চাটতে বলেন। কান মুলে দেন।’’ অভিভাবকদের তরফ থেকে পারুল দাস বলেন, ‘‘শিশুরা যদি ঠিক মতো পড়াশোনা না করে, তা হলে বকাঝকা করতেই পারেন শিক্ষকেরা। তাই বলে এমন শাস্তি দিতে হবে ! এই জিনিস কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও ওনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে, ছেলে মেয়েদের মারধর করেছেন। বাথরুমে পর্যন্ত যেতে দিতে চান না তিনি।

সৌমিত্রর সাফাই, ‘‘বাচ্চারা যাতে পড়াশোনা করে, সে জন্যই এমন শাস্তি দিতাম। এখন বুঝতে পারছি, ভুল হয়েছে। এমনটা আর হবে না।’’

সোমবার বিক্ষোভের মুখে পড়ে, শিক্ষকের ক্ষমা চাওয়ার পরে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে, তবে এখনও ভয় কাটছে না বাচ্ছাদের।

Show More

OpinionTimes

Bangla news online portal.

Related Articles

Back to top button

Discover more from Opinion Times - Bengali News

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading